পাহাড়ি বা বাঙ্গালি যে পরিচয় দিতে করো তুমি প্রচন্দ। সেনাবাহীনি পাহাড় নিরাপওা দিবে এটা নিয়ে মানায় না কোন ধন্ধ। তোমার পাহাড় তোমারি থাকবে মানুষ চায় নিরাপওা। এটাতেও বাধা দাও কেমন তোমার ব্যাক্তি স্বওা। পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠির জন্যও সংবিধানে রয়েছে বাড়তি সুবিধা। দেশের মানুষ এসব নিয়ে আওয়াজ তুলে নি। তোমরা আমরা এক সূ্েএ বাধা।
📌 প্রেক্ষাপট: পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) মূলত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, ম্রো, খুমি, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা ইত্যাদি) আবাসভূমি। ব্রিটিশ আমল থেকে এ অঞ্চল ছিল কিছুটা স্বশাসিত, কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে সেখানে বাঙালি বসতি স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্প বাড়তে থাকে, ফলে পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধ প্রকট হয়।
বিভিন্ন ইস্যু:
১️. ভূমি বিরোধ:
পাহাড়িদের অভিযোগ, তাদের ঐতিহ্যগত জমি দখল করে বাঙালিদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
২️. সামরিক উপস্থিতি:
পাহাড়িদের অনেকে মনে করেন, সেনা মোতায়েন পাহাড়িদের নিয়ন্ত্রণ ও ‘বাঙালিকরণ’ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ বলে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই সেনাবাহিনী রয়েছে।
৩️. পার্বত্য শান্তিচুক্তি (১৯৯৭):
বড় ধরনের বিরোধ মেটাতে ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS)-এর চুক্তি হয়। কিন্তু অনেক দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি বলে পাহাড়িরা অভিযোগ করে।
৪️. সংবিধানিক সুবিধা:
বাংলাদেশ সংবিধানে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জন্য বিশেষ কোটাসহ কিছু বাড়তি সুবিধা রাখা হয়েছে শিক্ষা, চাকরি, ও উন্নয়ন প্রকল্পে।
৫️. ‘তোমরা-আমরা’ বিভাজন:
তোমার লেখায় ‘তোমরা-আমরা’ শব্দ এসেছে, বাস্তবে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে এখনও কিছু মানসিক দূরত্ব, অবিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক বিভেদ রয়ে গেছে, যা সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মেটানোর প্রয়োজন।
📌 পাহাড়িদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে দাবি:
* ভূমির স্বত্ব নিশ্চিত করা
* সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার (সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি)
* আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি
* আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি (এখন বলা হয় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’)
* ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ
📌 বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের বাস্তবতা:
* অনেকে সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় এসেছে।
* তারা নিজেরাও বলে, পাহাড়ের উন্নয়ন হলে বাঙালিরাও তার সুফল পাবে।
* বাঙালিদের অনেকে পাহাড়িদের ‘বিশেষ সুবিধা’র বিরোধিতা করেন।
📌 বিচার-বিশ্লেষণ:
👉 নিরাপত্তা বাহিনী থাকা বা না থাকা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত উভয় পক্ষের সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
👉 পাহাড়িদের জমি ও সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ও আন্তরিক হতে হবে।
👉 ‘তোমরা-আমরা’র বিভেদ দূর করতে সমান অধিকার, আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি ও শিক্ষার সুযোগ দরকার।
📌 ভবিষ্যতের করণীয়:
১. শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন
২. ভূমি বিরোধের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি
৩. সামাজিক মেলবন্ধনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি
৪. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
📌 শেষ কথা:
বাংলাদেশ সবার — পাহাড়ি, বাঙালি সবাই এই দেশের নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন, নিরাপত্তা, অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও সহমর্মিতা অপরিহার্য।