
নিজের খেয়ে অন্যের নামে করে যারা কুটনামি। বিভেক জাগ্রত হলে বুজবে সময় ছিল কত দামী। প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার ইচ্ছে না হোক কোনদিনই। কাঠ খোড় পুড়ে বড় হলে গুছে যাবে সব দুঃখ কষ্টের দিন। নষ্ট করেছি সময় ভূল করে দিয়েছি মাসুল। মালা গাথেনি কেউ আমি মাটিতে পড়ে থাকা বকুল।
🔍 পঙক্তিগুলোর ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য
১. “নিজের খেয়ে অন্যের নামে করে যারা কুটনামি”
এখানে বলা হচ্ছে, এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজের ত্যাগ বা কষ্ট দিয়ে অন্যের নাম উজ্জ্বল করে তোলে, অথচ তারাই পরবর্তী সময়ে কুটনামি করে, পরনিন্দা করে। এটা একধরনের কৃতঘ্নতা ও হিংসার প্রতিফলন।
২. “বিভেক জাগ্রত হলে বুজবে সময় ছিল কত দামী”
এই লাইনটি গভীর বোধের। যখন মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়, তখন সে বুঝতে পারে অতীতের সময়গুলো কত মূল্যবান ছিল। কিন্তু তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটি অনুশোচনার প্রতিচ্ছবি।
৩. “প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার ইচ্ছে না হোক কোনদিনই”
এখানে উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে—প্রতিশোধ বা হিংসা যেন কারো মনে বাসা না বাঁধে। কারণ এগুলো মানুষের মনকে বিষিয়ে তোলে।
৪. “কাঠ খোড় পুড়ে বড় হলে গুছে যাবে সব দুঃখ কষ্টের দিন”
এই পঙক্তিতে বলা হয়েছে, কাঠ যেমন আগুনে পুড়ে শক্তিশালী হয়ে জ্বলে ওঠে, তেমনি মানুষও কষ্ট সহ্য করে পরিণত হয়। ধৈর্য ধরে থাকলে দুঃখ-কষ্টের দিন কেটে যায়।
৫. “নষ্ট করেছি সময় ভূল করে দিয়েছি মাসুল”
এখানে স্বীকারোক্তি আছে—কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা অজ্ঞতায় সময় নষ্ট হয়েছে এবং তার মূল্যও দিতে হয়েছে। এটি অনুশোচনার অনুভূতি।
৬. “মালা গাথেনি কেউ আমি মাটিতে পড়ে থাকা বকুল”
এই অংশটি সবচেয়ে কাব্যিক। বকুল ফুল ছোট, ঝরে পড়ে, কেউ মালা গাঁথে না। কবি নিজেকে তেমনই নিঃসঙ্গ, অবহেলিত বলে তুলনা করেছেন। তবু এতে একধরনের সৌন্দর্য আছে—নীরবতা ও নম্রতা।
🧭 বিষয়ের সারমর্ম ও দার্শনিক দিক
এই লেখাটি একধরনের আত্মসমালোচনা, জীবনের শিক্ষা, এবং ধৈর্য, ক্ষমা ও আত্মজাগরণের বার্তা বহন করে। এটি বলছে:
- হিংসা বা প্রতিশোধ নয়, বরং বিবেক ও সহানুভূতির জাগরণই মানুষকে পরিণত করে।
- সময় নষ্ট না করে, কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।
- প্রত্যাখ্যাত হলেও নিজের মূল্য হারানো উচিত নয়।
📚 এ জাতীয় লেখার প্রকৃতি
এটি মূলত “আত্মদর্শনের কবিতা” বা দার্শনিক ভাবনার ছন্দবন্ধ লেখা। এমন লেখায় অনুভূতি, উপলব্ধি ও জীবনের গভীরতা মিশে থাকে।